আলোর মনি রিপোর্ট: লালমনিরহাটে ক্লু-লেস হত্যা মামলার রহস্য উদঘাটন হয়েছে। পুত্র কর্তৃক পিতা হত্যা মামলার রহস্য দীর্ঘ ৪বছর পর সিআইডি কর্তৃক উদঘাটন হয়। ক্রিমিনাল ইনভেষ্টিগেশন ডিপার্টমেন্ট (সিআইডি) লালমনিরহাট জেলার তদন্তে ৪বছর পর বেড়িয়ে এসেছে আসল রহস্য।
বৃহস্পতিবার (২ জুন) সকাল ১১টায় ইনভেষ্টিগেশন ডিপার্টমেন্ট (সিআইডি) লালমনিরহাট জেলা কার্যালয়ে মিট দ্যা প্রেসে এমনটিই জানিয়েছেন সি.আই.ডি লালমনিরহাট জেলা অতিরিক্ত বিশেষ পুলিশ সুপার মোঃ ইসমাইল পিপিএম (বার) সূত্রে জানা গেছে, কালীগঞ্জ (লালমনিরহাট) থানার ২৯, তারিখ-৩১/০৭/২০১৮খ্রিঃ, ধারা- পেনাল কোড ১৮৬০ এর ৩০২/৩৪। ঘটনাস্থল কালীগঞ্জ থানাধীন নিথক অচিনতলা মৌজাস্থ বাদী মোঃ জাহিদুল ইসলামের বসত বাড়ির দক্ষিণ দুয়ারী টিনের চৌচালা ঘরের মধ্য, জেলা- লালমনিরহাট।
তিনি ঘটনার সংক্ষিপ্ত বিবরণে বলেন, গত ৩০/০৭/২০১৮খ্রিঃ বাদীর পিতা ভিকটিম গোলাম হোসেন চাকলা হল মার্কেটে তার ব্যবসা প্রতিষ্ঠান থেকে রাত অনুমান ১১.৫০ ঘটিকায় বাড়ীতে এসে রাতের খাওয়া শেষে তার উত্তর ভিটির দক্ষিন নুয়ারী টিনের চৌচালা ঘরের চৌকির উপর ঘুমিয়ে পড়ে। একই রাত অর্থাৎ ৩১/০৭/২০১৮খ্রিঃ রাত অনুমান ০১.৪৫ ঘটিকায় ভিকটিমের চিৎকারে বাদী তার স্ত্রী ঘুম থেকে জেগে বাদীর পিতার ঘরে গিয়ে দেখে বাদীর পিতার সারা শরীর রক্তে ভেজা, তার পড়নের কাপড় উলঙ্গ এবং তার গলায় ঘাড়ে, কাধে ও দুই হাতে সহ শরীরের বিভিন্ন স্থানে ধাঁরালো অস্ত্রের মারাত্মক আঘাত। কিন্তু তখনও তার পিতা অজ্ঞান অবস্থায় বেঁচেছিল। বাদীর চিৎকারে তার চাচা আজিজার রহমান মন্টুসহ আশেপাশের লোকজন আসিতে থাকে। এর মধ্যে ভিকটিম মারা যায়। পরবর্তীতে ভিকটিমের বড় ছেলে মোঃ জাহিদুল ইসলাম বাদী হয়ে কালীগঞ্জ থানায় অভিযোগ দাখিল করলে, কালীগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ মামলা নং- ২৯ তারিখ ৩১/০৭/১৮খ্রিঃ ধারা- ৩০২/৩৪ পেনাল কোড রুজু করেন। মামলাটি দীর্ঘ চার বছর যাবত থানা এবং সিআইডি’র মোট ০৬ (ছয়) জন তদন্তকারী কর্মকর্তা তদন্তকার্য পরিচারনা করেন। পরবর্তীতে সিআইডি লালমনিরহাট জেলার এসআই (নিঃ) মোঃ জায়েদ আলী জাহিদ সাত নম্বর তদন্তকারী কর্মকর্তা হিসেবে গত ২১/০৩/২০২২খ্রিঃ অত্র মামলার তদন্তভার গ্রহণ করেন। গোপন সূত্রের ভিত্তিতে অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি), বাংলাদেশ পুলিশ, লালমনিরহাট জেলার অতিরিক্ত বিশেষ পুলিশ সুপার মোঃ ইসমাইল, পিপিএম (বার) এর তত্বাবধানে তদন্তকারী কর্মকর্তা উপ-পুলিশ পরিদর্শক (নিঃ) মোঃ জায়েদ আলী জাহিদ এর নেতৃত্বে সঙ্গীয় উপ-পুলিশ পরিদর্শক (নিঃ) আল আমীন, উপ-পুলিশ পরিদর্শক (নিঃ) মোঃ শামছুল আলমসহ সিআইডি, লালমনিরহাট জেলার একটি টিম উক্ত মামলার সন্দিগ্ধ আসামি ভিকটিমের ২য় ছেলে মোঃ জাহাঙ্গীর আলমকে গত ১০/০৪/২০২২খ্রিঃ লালমনিরহাট জেলার কালীগঞ্জ থানাধীন নিথক অচিনতলা এলাকা থেকে গ্রেফতার করা হয়। উক্ত আসামীকে গত ১১/০৪/২০২২খ্রিঃ সাত দিনের পুলিশ রিমান্ডের আবেদনসহ বিজ্ঞ আদালতে প্রেরণ করা হয়। বিজ্ঞ আদালত গত ২৯/০৫/২০২২খ্রিঃ উক্ত আসামীর ০২ (দুই) দিনের পুলিশ রিমান্ড মঞ্জুর করেন। আদালতের নির্দেশক্রমে গত ৩০/০৫/২০২২খ্রিঃ উক্ত আসামীকে লালমনিরহাট জেলা কারাগার হতে পুলিশ রিমান্ডে নিয়ে নিবিড়ভাবে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তাসহ সিআইডির অন্যান্য অফিসারদের সু কৌশলে জিজ্ঞাসাবাদে উক্ত আসামী তার দোষ স্বীকার করে। সে জানায় যে তার বাবা ২০০৯ সালে কবিরাজী চিকিৎসার মাধ্যমে তার যৌন ক্ষমতা নষ্ট করে। পরবর্তীতে ২০১০ সালে আসামি বিয়ে করলে বাসর ঘরেই সে বুঝতে পারে তার যৌন সক্ষমতা নাই। অনেক চেষ্টার পরেও সে শারীরিক ভাবে যৌন সক্ষমতা অর্জন করতে পারেনি। যার কারণে সাংসারিক জীবনে তার স্ত্রীর সাথে অশান্তি লেগে থাকত। দীর্ঘ ০৮বছর তার স্ত্রীর সাথে সংসার করলেও যৌন অক্ষমতার জন্য সাংসারিক অশান্তি থেকে তার বাবার প্রতি ক্ষোভ জন্মে। তখন সে মনে করে বাবাকে মেরে ফেললেই সে তার যৌবন শক্তি ফিরে পাবে। এর পর থেকে সে তার বাবাকে হত্যা করার জন্য সুযোগ খুঁজতে থাকে। গত ৩০/০৭/২০১৮খ্রিঃ তার স্ত্রী ঢাকায় গার্মেন্টস-এ চাকুরী রত থাকাকালে ঐ দিন রাতে বৃষ্টি ও হালকা ঝড়ের কারণে আসামী জাহাঙ্গীর ঘুমাতে পারছিল না। তখন সে তার বাবাকে হত্যা করার পরিকল্পনা করে। পরিকল্পনা অনুযায়ী ঐ রাতেই বাড়ির পূর্বে পাশে তার ছোট চাচা মন্টু মিয়ার জমিতে গর্ত করে, যাতে সেই গর্তে তার বাবার লাশ রাখা যায়। তারপর রাত ০১.৩০ ঘটিকার দিকে রান্না ঘর থেকে দা নিয়ে সে তার বাবার শয়ন ঘরে প্রবেশ করে। ঘুমন্ত অবস্থায় সে তার বাবাকে গলায় দা দিয়ে কুপিয়ে রক্তাক্ত অবস্থায় রেখে ঘর থেকে বেড়িয়ে আসে। এরপর সে বাড়ির পেছনে জঙ্গলে দাড়ি লুকিয়ে রেখে টিউবওয়েলে হাতপা ধুয়ে তার ঘরে এসে শুয়ে পড়ে। তার বাবার গোঙ্গানোর শব্দ পেয়ে তার বড় ভাই জাহিদুল ও তার ভাবি তার বাবার ঘরে প্রবেশ করে দেখতে পায় তার বাবা মৃত অবস্থায় বিছানায় পড়ে আছে। নিহত গোলাম হোসেনের কারণেই তার যৌন ক্ষমাতা নষ্ট হওয়ায় আসামি জাহাঙ্গীর আলাম তার বাবা গোলাম হোসেনকে নিশংসভাবে হত্যা করেছে বলে লালমনিরহাটের সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট ইসরাফিল আলম এর বিজ্ঞ আদালতে স্বেচ্ছায় সিআরপিসি-১৬৪ ধারা মতে গত ৩১/০৫/২০২২খ্রিঃ তারিখ দোষ স্বীকার করে জবানবন্দী প্রদান করেছে।